সুন্দরবন অঞ্চলের বন্যা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ?

সুন্দরবন অঞ্চলের বন্যা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ?


⇛ভূমিকাঃ- সুন্দরবন অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণাংশে অবস্থান করছে, এর পাশাপাশি বাংলাদেশেও  সুন্দরবন অঞ্চলটি লক্ষ্য করা যায়। গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের বাহিত পলি রাশি জমাট হয়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকে এবং এখানে একটা ব-দ্বীপ সমভূমির গঠন করেছে যা পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি, এই ব-দ্বীপ সমভূমির উপর আমাদের এই সুন্দরবন অঞ্চলটি  গড়ে উঠেছে। এই সুন্দরবন অঞ্চলে লবণাক্ত পরিবেশে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।যেমন সুন্দরী গরান, গেওয়া, গোলপাতা, প্রভৃতি এরমধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণে আমরা সুন্দরী বৃক্ষকে দেখতে পাই। তাই এই সুন্দরী বৃক্ষের জন্য এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে, সুন্দরবন অঞ্চল। যা ভারতের প্রায় ৩৭ মিলিয়ন হেক্টর জুড়ে অবস্থান করছে।

      সুন্দরবন অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হলো বন্যা। এই বন্যার পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাখা নদীর জোয়ারের জলে পুষ্ট নদীর জল গুলি বর্ষাকালে প্রবল বন্যা সৃষ্টি করে। যেমন ভাগীরথী ও হুগলি নদীর শাখা,যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনকে দুর্দশা ময় করে তুলে।


⇛উদ্দেশ্যঃ- 

১)সুন্দরবন অঞ্চলের ভূমিরূপ গত অবস্থান।

২) বন্যার কারণ।

৩)বন্যা সৃষ্টিতে মানুষের ভূমিকা।

৪)বন্যার প্রভাব।

৫)বন্যা প্রতিরোধের উপায়।


⇛তথ্যের বিশ্লেষণঃ- 


১)জলবায়ুঃ- সুন্দরবন অঞ্চল ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত, গড় উষ্ণতা 32 ডিগ্রি থেকে 35 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 থেকে 200 সেমি। এখানে জুন থেকে অক্টোবর মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং সব থেকে কম বৃষ্টিপাত হয় ডিসেম্বর মাসে।

২)ভূ-প্রকৃতিঃ-সুন্দরবন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 0.11 মিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে এখানে ভূমিরূপ গত বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায় না।

 ৩)নদ-নদীঃ-সুন্দরবন অঞ্চলের নদী গুলি সাধারণত জোয়ারের জলে পুষ্ট এই অঞ্চলের নদী গুলি হল---মাতলা নদী, সপ্তমুখী নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঠাকুরানী নদী, রায়মঙ্গল নদী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই নদী গুলি প্রধানত ভাগীরথী ও হুগলি নদীর শাখা নদী,এই নদী গুলির উপর প্রায় 3500 কিমি স্থান জুড়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, এই অংশে প্রায় 151 সুইচগেট রয়েছে।

৪)স্বাভাবিক উদ্ভিদঃ-সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানে লবণাক্ত উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন সুন্দর্‌ গরান, গেওয়, গোলপাতা প্রভৃতি।

৫)ভূমির ব্যবহারঃ-সুন্দরবন অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ ম্যানগ্রোভ অরণ্যে আবৃত রয়েছে, এখানে জনসংখ্যার পরিমাণ এক সময় খুব কম ছিল কিন্তু বর্তমানে দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য, অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অরণ্য কেটে জনবসতি স্থাপন ও চাষের ক্ষেত্রে ভূমির ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এর ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছ।

⇛সুন্দরবন অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টির কারণঃ-সুন্দরবন অঞ্চলটি নিম্ন সমভূমির অন্তর্গত হওয়ার কারণে সমুদ্র সংলগ্ন অঞ্চল গুলি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে বন্যার কারণ গুলি হল----

ক)প্রাকৃতিক কারণঃ-
১)সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ-পৃথিবীব্যাপী গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্র জলের উচ্চতা বাড়ার, ফলে উপকূলীয় দ্বীপগুলি ধীরে ধীরে সমুদ্রের তলায় ডুবে যাচ্ছে।

২)নদীর গভীরতা হ্রাসঃ-প্রতিনিয়ত এই অংশজুড়ে নদীগর্ভে পলি, বালি, কাঁদা ইত্যাদি জমাট হওয়ার ফলে, নদীর গভীরতা ক্রমশ কমছে, ফলে জল ধারণ ক্ষমতা কমছে, এবং বর্ষাকালে নদীর জল ভরার বেঁধে বন্যার সৃষ্টি করে।

৩)অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতঃ-সুন্দরবন অঞ্চল ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত, এই অঞ্চলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দ্বারা বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয, এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে এই অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়।

৪)এল-নিনোর প্রভাবঃ-এল-নিনোর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটে, ফলে সুন্দরবন অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। 

খ)মনুষ্য সৃষ্টি কারণঃ-
১)বৃক্ষচ্ছেদনঃ-মনুষ্য বসতি গড়ে তোলার জন্য এবং কৃষি সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়, ফলে বৃক্ষ না থাকার কারণে বৃষ্টির জলের দ্বারা মৃত্তিকার ক্ষয় হয়, এবং ধীরে ধীরে ভূ-প্রাকৃতিক নিচু হয়ে যায়।

 ২)বাঁধ নির্মাণঃ-বাঁধ নির্মাণের জন্যেও বন্যা সৃষ্টি হয়।

৩)জমি উদ্ধারঃ-জমি উদ্ধার করতে গিয়ে সুন্দরবন অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়,যা এই অঞ্চলের বন্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।

⇛সুন্দরবন অঞ্চলের বন্যা প্রতিরোধের উপায়ঃ-

১)বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থাঃ-সকলকে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এই অঞ্চলে যত গাছ কাটা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করতে হব, তবে এই অঞ্চলকে আমরা রক্ষা করতে পারব। 

২)নদীবক্ষ পরিষ্কার করতে হবেঃ-ভূমি ভাগের অতিরিক্ত ক্ষয় প্রাপ্ত পদার্থ নদীবক্ষে জমা হয, তা পরিষ্কার করতে হবে, নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে, যাতে নদীতে বেশি পরিমাণে জল ধারণ ক্ষমতা থাকে।

৩)নদীর বাঁধের সংস্কারঃ-নদীবাঁধ গুলি মেরামত করতে হবে।

 ⇛মূল্যায়নঃ-উপরিউক্ত কারণগুলি থেকে আমরা এটা জানতে পারি যে, সুন্দরবন অঞ্চল দিনদিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গ তথা সারাবিশ্ব যে ভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে এর ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়,ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে  যা সুন্দরবন তথা পৃথিবীব্যাপী সমস্যা হয়ে উঠেছে।


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

Climate Identification From Warming And Precipitation Charts?উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র থেকে জলবায়ু শনাক্তকর?